শিক্ষা ও চাকরির দাবিতে বাম যুব ও ছাত্র সংগঠনের নবান্ন অভিযানকে যেভাবে রুখে দেওয়া হয়েছে, যে রক্তাক্ত চিত্র উঠে এসেছে, তাতে তাজ্জব গোটা রাজ্যই। বন্ধ রাখা হয়েছিল বিভিন্ন গলি। রণক্ষেত্র ধর্মতলা, জানবাজার এলাকা। পুলিশও বন্দি ব্যারিকেডে। অভিযান নিয়ন্ত্রণের জেরে বৃহস্পতিবার জখম হয়েছেন বহু বাম সমর্থক। কারো মাথায়, কারো চোখে লেগেছে লাঠির আঘাত। যদিও লালবাজার পাল্টা দাবি করেছে যে অভিযানকারীদের হামলায় আহত হয়েছেন কয়েকজন পুলিশকর্মীও। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুলিশের অন্দরমহলেও দ্বিমত তৈরি হয়েছে। পুলিশের একাংশ আহতের সংখ্যা বেশি হওয়ার পিছনে পুলিশের ‘পরিকল্পনাগত ত্রুটি’কে দায়ী করছেন। প্রাক্তন পুলিশকর্তা, কর্মরত আধিকারিকদের বেশ কয়েকজন সেই সুরেই গলা মিলিয়েছেন। অন্যদিকে লালবাজার এই ত্রুটির কথা অস্বীকার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নিউ মার্কেট, ধর্মতলার অলিগলি বন্ধ রাখা হয়েছিল। পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচতে পালাতেও পারেননি মিছিলকারীরা। বাম যুব নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী বলেন, ‘‘চার দিক থেকে আটকে পুলিশ লাঠি, জলকামান, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়েছে। মেয়েদের বেধড়ক মেরেছে।’’ বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, মহিলাদের ওপর পুলিশ লাঠি চালিয়েছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশ ছিল না। এমনকি, আহতদের অনেককেই পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়নি। মিছিলে আহত এক যুবকের অভিযোগ, ‘‘আমি পড়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ লাথি মেরেছে।’’ লাঠির ঘায়ে আহত এক মহিলার অভিযোগ, ‘‘পুরুষ পুলিশকর্মীরা আমাকে গালিগালাজ করেছেন।’’
কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার মনে করেন, এই ধরনের নিরস্ত্র আন্দোলন সংযত মেজাজে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। মহিলাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংযত মনোভাব দেখানো প্রয়োজন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, মহিলাদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত মহিলা পুলিশ বোধহয় নেই।'
একই বক্তব্য রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তেরও। তিনি বলেন, ছাত্র-যুবদের মিছিল নিয়ন্ত্রণে অনেক সংবেদনশীল হতে হবে। মিছিলকারীরা আহত হলে পুলিশেরই তো দায়িত্ব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। তবে মিছিলকারীরাও যে ভাবে পুলিশের উপরে চড়াও হয়েছেন, তা অনভিপ্রেত। অনেকের মাথায় লাগা নিয়ে তাঁর প্রশ্ন, নিয়ম অনুযায়ী, লাঠি চালানোর সময়ে পায়ের পিছনে আঘাত করা হয়। তা হলে কি কলকাতা পুলিশের কর্মীদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকছে? এসএন ব্যানার্জি রোডে যেখানে মিছিল আটকানো হয়েছে, সেটাও ভৌগোলিক দিক থেকে যথাযথ নয় বলে মনে করেন তিনি।
বাম ছাত্র-যুবদের রোখার পদ্ধতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজের শিল্পী, সাহিত্যিক, বিদগ্ধজনেরা।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার জানান, এদিন যা ঘটল তা ফ্যাসিজমের প্রতীক ছাড়া আর কিছু নয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রাক্তন উপাচার্য শুভঙ্কর চক্রবর্তীর কথায়, এই অগণতান্ত্রিকতা এই সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিতই ছিল।
অভিনেতা সৌরভ পালধির বক্তব্য, দলদাস পুলিশের লাঠি চালানোরই পরিকল্পনা ছিল।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।