তাইওয়ান নিজেদের নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করলে চীনের বিপক্ষে থাকবে আমেরিকা। জাপানে 'কোয়াড' বৈঠকে যোগ দিয়ে এমনটাই জানালেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। শুধু তাই নয়, দ্বীপরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সবরকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "আমরা 'এক চীন নীতি'তে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি ঠিকই, তাই বলে এটা নয় যে তাইওয়ানকে বলপূর্বক দখল করলে আমরা চুপ থাকব।"
গোটা তাইওয়ানের জলপথ চীনের রণতরী দ্বারা আবদ্ধ। যে কারণেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন বিষ্ফোরক মন্তব্য করেছেন। সোমবার টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মিলিত হয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সরাসরি চীনকে হুঁশিয়ারি দেন।
বাইডেন আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আমেরিকা যেভাবে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছিল ঠিক সেভাবেই এবার আরও বড় পদক্ষেপ নিয়ে তারা তাইওয়ানের পাশেও দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে বাইডেন জানান, আমেরিকা রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রায় হাজার কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্রশস্ত্র, সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছে ইউক্রেনকে। যদিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে সেনা পাঠিয়ে ইউক্রেনকে সরাসরি সাহায্য করেনি কোনও পশ্চিমী দেশই।
উক্ত সম্মেলনে কোনো এক সাংবাদিক বাইডেনকে প্রশ্ন করেন, "ইউক্রেন সঙ্কটে আপনার দেশ যুক্ত হয়নি। কিন্তু তাইওয়ানের ক্ষেত্রেও একই পরিণাম হলে আপনারা কি যুদ্ধে নামবেন!" এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, "হ্যাঁ যুদ্ধে নামব। এটাই আমাদের অঙ্গীকার।" সূত্রের খবর অনুযায়ী, মূলত এই মন্তব্যের জেরেও আমেরিকা-চীন সংঘাত ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সমুদ্রে অবস্থিত দ্বীপ তাইওয়ান নিজেদের স্বায়ত্বশাসিত রাষ্ট্র বলে দাবি করে। এদিকে, চীন মনে করে তাইওয়ান চীনেরই অঙ্গ। তবে ঐতিহাসিকভাবে তাইওয়ান চীনের অংশ বলেই জানা যায়। ১৯৪৯ সালের গৃহযুদ্ধে মাও সে তুং-র নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট বাহিনীর কাছে চিয়াং কাইশেকের নেতৃত্বাধীন কুওমিনতাং গোষ্ঠী পরাজিত হয়ে তাইওয়ানে চলে যায়।
প্রসঙ্গত, তাইওয়ান নিয়ে আমেরিকার অবস্থান যথেষ্ট গোলমেলে। ১৯৭০–এর দশকের শুরুতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেয় মার্কিন প্রশাসন। সাথে সাথে তাইওয়ানের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেওয়া স্বীকৃতিও ফিরিয়ে নেয় তারা। আমেরিকা মেনে নেয় তাইওয়ান চীনের মূল ভূখণ্ডেরই অংশ। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশই পরিবর্তন হতে থাকে। চীন ক্রমে সুপার-পাওয়ারে পরিনত হতেই আমেরিকা তাইওয়ান নিয়ে অস্পষ্ট অবস্থান নিতে থাকে।
অন্যদিকে, বাইডেনের বিষ্ফোরক মন্তব্যের জেরে কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন তাঁর প্রশাসনিক কর্তারা। যদিও, পূর্বে তাইওয়ানে যুদ্ধ ঘোষণার ব্যাপারে চীনকে বেশ কয়েকবার হুঁশিয়ারি দেয় আমেরিকা। কিন্তু কখনও এরূপ হুঁশিয়ারি জারি করেনি। যার ফলে দ্রুত তারা জানানোর চেষ্টা করে যে বাইডেন যুদ্ধে নামার কথা বলতে চাননি। অবশ্য বাইডেনের মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি চীনের তরফ থেকে।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।