বিজেপি শাসিত গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রী বিশ্বজিৎ রানের পদত্যাগ দাবি করলেন গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। কোভিড-১৯ সেকেন্ড ওয়েভের সময় অক্সিজেনের অভাবে রাজ্যে প্রায় ৮০ জনের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি এই দাবি করেছেন। সম্প্রতি গোয়া সরকার নিয়োজিত এক কমিটি এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে।
তদন্তের পর ওই কমিটি জানিয়েছে, গোয়া সরকার, গোয়া মেডিক্যাল কলেজের উদাসীন আচরণের জন্যেই এই ঘটনা ঘটেছে। কোভিড দ্বিতীয় ঢেউ-এর সময় পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার গোয়া বিধানসভার বিরোধী বিধায়করা ওয়াক আউট করে। সোমবার থেকেই দু’দিনের এই অধিবেশন শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জবাব দাবি করেছে বিরোধীরা।
অক্সিজেন বিপর্যয় সংক্রান্ত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, গোয়া মেডিকেল কলেজ সঠিক সময়ে অক্সিজেনের ঘাটতি সম্পর্কে জানায়নি। আদালতে অক্সিজেন সম্পর্কে চাহিদার দাবি পেশ করা ছাড়া তারা কিছুই করেনি। গত ১ মে ২০২১ গোয়া অ্যাসোসিয়েশন অফ রেসিডেন্টস ডক্টরস অক্সিজেন প্রসঙ্গে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলো তা নিয়েও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। যদি এই চিঠির পরেই যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হত সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হত।
এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি গোয়ার ডিরেক্টর ডঃ বি কে মিশ্রা, গোয়া মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন ডিন ডাঃ ভি এন জিন্দাল এবং রাজস্ব সচিব সঞ্জয় কুমার।
এই রিপোর্টেই অক্সিজেন সরবরাহে একচেটিয়া ব্যবস্থা কায়েম করার জন্য হাসপাতাল প্রশাসনের সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, জুন ২০১৮-র রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশিকা অনুসারে মেসার্স স্কুপকে গোয়া রাজ্যের সমস্ত চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের জন্য অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। যার ফলে সমস্ত রাজ্যে একমাত্র ওই সংস্থাই অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। ফলত কোনো সংস্থার কাছে অক্সিজেন সরবরাহের আর কোনো বিকল্প পথ খোলা নেই। যখন গোয়া মেডিকেল কলেজে অক্সিজেনের প্রয়োজন বাড়ে তখন কোনো বার্তা বা চিঠি ছাড়াই মেসার্স স্কুপ গোয়া মেডিকেল কলেজ ছাড়া অন্যান্য হাসপাতালের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরেই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, যদি তাঁরা দায়িত্ব নিতে অপারগ তাহলে গোয়া রাজ্যে কেন একটি স্বাস্থ্য দপ্তর এবং একজন স্বাস্থ্য মন্ত্রী আছে? এই রিপোর্টের পর অবশ্যই মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ করা দরকার।
রিপোর্ট নিয়ে অভিযোগ তুলে কংগ্রেসের বক্তব্য, অক্সিজেন ঘাটতি এবং মৃত্যু নিয়ে তথাকথিত বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট রাজ্য সরকারকে ক্লিন চিট দেবার এক ঘৃণ্য প্রচেষ্টা। যেখানে গোয়া মেডিকেল কলেজকে সবকিছুর জন্য দায়ী করা হয়েছে অথচ সরকারের কোনো দায়ভার নেই।
এই প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দিগম্বর কামাথ এক ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, এই সরকার বিধানসভায় তাঁর প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ। গোয়ার বিজেপি সরকারই অক্সিজেন ঘাটতি জনিত মৃত্যুর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী।
বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্ব চলাকালীন এদিন বিরোধীরা ওয়াক আউট করে। এর আগেই স্পীকার রাজেশ পাটনেকর জানান শারীরিক অসুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না এবং তিনি অধিবেশন মুলতুবির দাবি জানিয়েছেন।
- with inputs from IANS
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।