
রাজধানী শহর বেঙ্গালুরুতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কারচুপির অভিযোগ সরিয়ে এবার সামনে এসেছে ভোটার তালিকায় কারচুপির অভিযোগ। ভোটমুখী কর্ণাটকে গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস এই অভিযোগ তোলার পর এখন রাজনীতির ময়দান সরগরম।
কর্ণাটকে যখন ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, সেই সময় ভোটারের তথ্য হাতিয়ে নেবার অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। তাদের সরাসরি অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের কর্ণাটক রাজ্য ইউনিটের অভিযোগ অনুসারে, বিজেপির পক্ষ থেকে বেঙ্গালুরুর ভোটারদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বেঙ্গালুরুতে ২৮ টি বিধানসভা কেন্দ্র জুড়ে প্রায় ৮০ লক্ষ ভোটার রয়েছে। ২২৪ আসন বিশিষ্ট কর্ণাটক বিধানসভায় জয়লাভের ক্ষেত্রে এই আসনগুলিতে জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস দাবি করে, চিলুমে এডুকেশনাল কালচারাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট নামের এক এনজিও এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি রাজ্যের রাজধানী জুড়ে বেশ কয়েকটি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারদের তথ্য জালিয়াতি করে সংগ্রহ করেছে।
কংগ্রেসের আরও অভিযোগ, শহরের নাগরিক কর্তৃপক্ষ বিবিএমপি দ্বারা নিযুক্ত বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসাবে তথ্য সংগ্রহ করার পরে, এনজিও কর্মীরা এই সমস্ত তথ্য এনজিওগুলির একটি নিজস্ব অ্যাপে আপলোড করেছে।
কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা রাজ্যের বিজেপি সরকারকে ভোটারদের তথ্য চুরি এবং নির্বাচনী জালিয়াতিতে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা সিদ্দারামাইয়া মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোম্মাইকে এই প্রসঙ্গে আক্রমণ করে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেন।
সিদ্দারামাইয়া বলেন, "বোম্মাইকে গ্রেপ্তার করা উচিত। তাঁর পদত্যাগ করা উচিত কারণ তিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাতে তাঁর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই। কর্ণাটকের ইতিহাসে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের ষড়যন্ত্র, চুরি এর আগে কখনও ঘটেনি।"
মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসকে পাল্টা করে বলেন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সিদ্দারামাইয়ার বিরুদ্ধেও তোলা যেতে পারে। বোম্মাই বলেন, "২০১৭ সালে সিদ্দারামাইয়া-র নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার বেআইনিভাবে চিলুম ট্রাস্টকে ভোটার তালিকা সংশোধন করার দায়িত্ব দিয়েছিল এবং কিছু জায়গায় বুথ-স্তরের আধিকারিকদের নিয়োগের অনুমতি দিয়েছিল।"
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, শহরের ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ৬.৭ লাখ নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩ লাখ নতুন নাম যুক্ত হয়েছে। এর ফলে পূর্ববর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীদের নির্বাচিত নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের বড় আকারে বাদ দেবার অভিযোগ উঠেছে।
তবে মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাই এমন সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে জানিয়েছেন, বিজেপির জয়ী হওয়া এক নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রায় ৪৬ হাজার ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কংগ্রেস-প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচনী এলাকার ভোটার তালিকা থেকে প্রায় ১৫ হাজার নাম বাদ গেছে।
কংগ্রেসের আনা অভিযোগের উত্তরে পাল্টা আক্রমণ করে বিজেপি বেঙ্গালুরু দক্ষিণ ইউনিটের সভাপতি এন আর রমেশ ভোটার তালিকায় প্রতিবেশী রাজ্যের সংখ্যালঘুদের নাম বড় আকারে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কংগ্রেস নেতাদের অভিযুক্ত করেছেন। তাঁর মতে, বেঙ্গালুরুর পুর নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে এটি করা হয়েছে।
রমেশ বলেছেন, "কংগ্রেস বেঙ্গালুরুর ২৭ টি বিধানসভা কেন্দ্রে ১.৫০ লক্ষ ডুপ্লিকেট ভোট যোগ করেছে"। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন।
আপাতত, এনজিওর প্রবর্তকদের খুঁজে বের করা বাকি রয়েছে, এমনকি এখনও পর্যন্ত দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন