এনকাউন্টার... কাউন্টার...

গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন
গ্রাফিক্স - সুমিত্রা নন্দন

৬ ডিসেম্বর। দিনটা কালো দিন হিসেবেই ইতিহাসে লেখা আছে। থাকবে। ভারতীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের এই দিনে বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে দিনভর চর্চায় থাকারই কথা ছিলো। যদিও গতকাল দেশের মানুষের ঘুম ভেঙেছিলো 'এনকাউন্টার'-এর খবরে। যে খবর আর সবকিছুকেই পেছনে ফেলে দেয়। তাই গতকাল মানুষের চর্চায় এক বীভৎস ধ্বংসলীলা, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কথা ছিলো না, ছিলো শুধুই এনকাউন্টার।

'এনকাউন্টার' ভালো বা মন্দ সে বিতর্কে এত তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়া ঠিক নয়। আবেগ সর্বস্বতা যতক্ষণ না থিতিয়ে যাবে ততক্ষণ এই ঘটনা ঘিরে 'গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়ানো' থেকে 'দারুণ ঘটনা' বলে পিঠ চাপড়ানো শুনতে হবে, দেখতে হবে। হিসেব নিকেশ – তা করতে তো ঠান্ডা মাথা লাগে।

হায়দারাবাদ পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনা সম্পর্কে একাধিক কথা বলা হয়েছে। করা হয়েছে একাধিক দাবিও। যদিও কেন প্রায় মাঝরাতে ঘটনার পুনঃনির্মাণের প্রয়োজন হলো বা কীভাবে ওই চার অভিযুক্ত বন্দি অবস্থায় হাতে অস্ত্র পেল এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালালো তা যথেষ্ট স্পষ্ট নয়। সকাল থেকে কোনো পুলিশ আহত হবার খবর না পাওয়া গেলেও পরে জানা গেছে এই ঘটনায় দু'জন পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি অনুসারে নিরস্ত্র অভিযুক্তরা পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে তাঁদের ওপর আক্রমণ চালায়। তখনই আত্মরক্ষায় নাকি পুলিশ গুলি চালায়।

ধর্ষকদের শাস্তি সকলেই চেয়েছেন। যার যার মত করে। যে কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষই ধর্ষণের অপরাধে কঠোরতম সাজাই চাইবেন। এ ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু ছিলোনা। নেই। প্রশ্ন উঠেছে পদ্ধতি নিয়ে। আইন হাতে নেওয়া নিয়ে।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেশ জুড়ে। 'খুব ভালো হয়েছে' বা 'খুব খারাপ হয়েছে'র পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআই(এম), বিজেপি, কংগ্রেস সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব। যাদের প্রায় সকলেরই মতে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকেই প্রশ্ন তুলেছেন পুলিসের ভূমিকা নিয়ে। অপরাধ প্রমাণের আগেই এভাবে শাস্তি দেওয়া যায় কিনা তা নিয়েও।

বিচারাধীন বিষয়। বহু মানুষের আবেগ জড়িত। এসব কিছুর বাইরেও এই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। অপরাধ প্রমাণের আগেই এভাবে পুলিশি গুলিচালনা কেন সে প্রশ্ন তুলেছেন বহু রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আইনজীবীরা। সদ্য সামনে এসেছে ছত্তিশগড়ে ঘটে যাওয়া ২০১২ সালের ফেক এনকাউন্টারের কথা। সাত বছর বাদে প্রমাণ হয়েছে বিনা কারণেই গুলি চালিয়ে ছত্তিশগড়ে আদিবাসীদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিলো। ভারতের বুকে কান পাতলে এরকমের আরও ফেক এনকাউন্টারের কথা শোনা যায়। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও। সেখানেও ঘুরে ফিরে সাতের দশক উঠে আসতে বাধ্য।

সবকিছুর শেষে একটা কথা বলাই যায়। গণতন্ত্রের পক্ষে এই প্রবণতা ভালো নয়। এই প্রক্রিয়া চলতে শুরু করলে চলতেই থাকবে। যা দেশের আইনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। সেই বিপদ কিন্তু কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না। তখন সামলানো যাবে তো?

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in